খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব পেলেন মো. হযরত আলী
  নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩
  আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণায় ভারতে ঢুকতে পারবে না পাকিস্তানের কোনো বিমান
মে দিবসে খুলনায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সমাবেশ

বন্ধকৃত পাটকলসহ সকল মিল-কলকারখানা চালুর দা‌বি

গেজেট ডেস্ক 

খালিশপুর জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস ও হার্ডবোর্ড মিলসহ বন্ধকৃত পাটকলসহ সকল মিল-কলকারখানা চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মাস্টার শফিকুল আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বিশ্বের মেহনতি শ্রমিকদের কাছে প্রেরণার দিন। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা বিনোদনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিল। সে আন্দোলনে সরকারের ইশরায় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলী ও হামলা চালিয়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকান্ড রচনা করেছিল। পরবর্তীতে শ্রমিকনেতাদের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তৎকালীন সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলির ওপর শ্রমিকরা বিজয়ের সৌধ নির্মাণ করেছে। শ্রমজীবী মানুষরা তাদের দাবি আদায়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলেছে। আত্মত্যাগের নজরানা পেশ করেছে। তবুও অন্যায় ও জুলুমের কাছে মাথানত করেনি। শ্রমজীবী মানুষের এই আত্মত্যাগ আমাদেরকে সম্মান করতে হবে। বছরে একদিন শ্রমিক দিবসকে সীমাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। শ্রমিক দিবসের তাৎপর্যকে ধারণ করতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সকল জুলুম নির্যাতনের অবসান করতে হবে। রাজপথে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠকে উচ্চকিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল ১০টায় নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি রোডস্থ খালিশপুর জুট মিলস্ চত্বরে (সাবেক পিপলস গোল চত্বর) খুলনা মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

শ্রমিক নেতা মাস্টার শফিকুল আলম সকল শ্রমজীবী মানুষকে ইসলামী আন্দোলনের পতাকাতলে এসে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে ও ইসলামী শ্রমনীতিকে বাস্তবায়নে অগ্রণী ভুমিকা রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মু. আজিজুল ইসলাম ফারাজীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন এবং মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি খাঁন গোলাম রসুল।

মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সাধারণ সম্পাদক ডা. সাইফুজ্জামানের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, ইস্টার্ণ জুল মিল মজদুর ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক খান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান ও কাজী মাহফুজুর রহমান, খালিশপুর থানা সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

কুরআন তেলাওয়াত করেন খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আবুল ফাত্তাহ রম্মান। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মো. আল ফিদা হোসেন ও মো. আজিজুর রহমান, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহিদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমীর মুশাররফ আনাসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মুনাওয়ার হুসাইন আনসারী, দৌলতপুর জুট প্রেস এন্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিঠু, মহানগরী সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, দফতর সম্পাদক, আল হাফিজ সোহাগ, বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল কবীর, হরিণটানা থানা সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি খান আব্দুল ওহেদ, আড়ংঘাটা থানা সভাপতি শাহিনুর রহমান, দৌলতপুর থানা সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বিআইরেল এর সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা পরিবহন শাখার সভাপতি কামাল হোসেন প্রমুখ।

প্রধান বক্তা অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের শ্রমজীবী মানুষকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা উন্নয়নের কারিগরি সেই শ্রমিক বা মেহনতি মানুষদের দাবি বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসে না। তিনি শ্রমিক সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ইসলামী শ্রমনীতি চালু, বন্ধককৃত পাটকলসহ সকল বন্ধ কল-কারখানা চালু, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকদের উপর হয়রানি বন্ধ, শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, বেতনভাতাসহ নারী শ্রমিকদের মাতৃকালীন ছুটি ৬ মাস করা এবং সকল ধরনের শিল্প-কলকারখানার শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করার দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, আমরা দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমিকের উন্নয়ন ও স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অন্তবতীকালীন সরকার গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনে আমরা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। অতীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা ঠিকমতো কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। আমরা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও মানোন্নয়নের জন্য সবসময় পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!